বর্তমান সরকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে। তবে সবার আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ করা জরুরি। দেশ ও জাতির স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই দেশের রাজস্ব যেমন বাড়বে তেমনিভাবে মূসক দিবসের সফলতা আসবে এবং শুল্ক বিভাগের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে, মর্যাদা বাড়বে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইংল্যান্ডে প্রচলন হয়েছিল টুপিকর। তখন টুপির ওপর স্ট্যাম্প লাগানো থাকত। এরপর ব্রিটেনের উইলিয়াম পিট একসময় ঘড়ি কেনার ওপর কর ধার্য করলে দোকানের মালিকরা রাস্তার ধারে সব ঘড়ি সাজিয়ে রেখে কর বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেন। শেষ পর্যন্ত কর প্রত্যাহৃত হয়। ১৮৭৫ সালে ইউগ পাউডারের ওপর করারোপ করেন। মূলত যারা নকল চুল পরতেন তারা এ পাউডার ব্যবহার করতেন। পরে নকল চুল পরা বন্ধই করে দিল লোকজন। একসময় চার্চিল খেলনা বন্দুকের ওপর কর ধার্য করে বসেন। নেপোলিয়ান যুদ্ধের জন্য আর্থিক সঙ্কট দূর করার উদ্দেশ্যে আয়কর প্রবর্তন করেন। ইতালির মুসোলিনির যুগে কিংবা তারও আগে ১৮২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে বিয়ে না করার শাস্তি পেতে হতো। আর এটা হতো অর্থনৈতিক শাস্তি। সে সময় মানুষকে দিতে হতো বিয়ে না করার কর। এ করের নাম ‘ব্যাচেলর ট্যাক্স’। ইংল্যান্ডে গ্লাড স্টোন আয়করব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সিগারেট ও মদের ওপর নতুন করে করারোপ করা হয়। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, এ পৃথিবীতে একমাত্র মৃত্যুবরণ আর কর হলো অনিত্য। বার্নাডশ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমার একটি নাটক জনপ্রিয় হলে আমিও শেষ হয়ে যাব’। বিশাল অঙ্কের করের জন্য তার এ উক্তি। রোমের সম্রাট আরোনিয়ান কর ও শুল্ক সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আয়োজন করে পুড়িয়ে ফেলে দেশের মানুষকে করমুক্ত করেছিলেন। ভারতবর্ষে আওরঙ্গজেব জিজিরা কর প্রবর্তন করেছিলেন। এরপর ১৮৩৯ সালে স্যার জেমস গ্রিগ ভারতীয় সংবিধানে প্রথম আয়করব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। পাশাপাশি লবণের ওপর ব্রিটিশ যে শুল্ক বসিয়েছিল তা থেকেই জন্ম নিয়েছিল অসহযোগ আন্দোলনের। ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মূসকের কার্যক্রম শুরু হয় প্রথম। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। যুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকাসহ ঔপনিবেশগুলো পর্যায়ক্রমে স্বাধীন হতে থাকে। তখন অর্থনৈতিক বাণিজ্য জোরদার ছিল না। এরপর ইইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মূসকব্যবস্থা শুরু হতে থাকে এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইইসি কাউন্সিল অধিবেশনে ১৯৬৭ সালের ১ এপ্রিল বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি আদেশ জারি হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে ইউরোপ ছাড়াও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো মূসকব্যবস্থায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। বর্তমান বিশ্বে ১৪৭টি দেশে মূসকব্যবস্থা প্রবর্তিত রয়েছে। বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর প্রবর্তনের ইতিহাস না বললেই নয়। ভারতবর্ষে ১৮৭৮ সালে আমদানি শুল্ক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এরপর অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে উপমহাদেশে ঞযব ঊীপরংব ধহফ ঝধষঃ অপঃ, ১৯৪৪ প্রবর্তন করা হয়। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান শুল্ক আইন আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রবর্তন করে। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর চালু করা হয় এবং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে ১০ জুলাই মূসক দিবস পালন করে আসছে। এ ছাড়া এ বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১০ জুলাই জাতীয় মূসক দিবস এবং ১০-১৬ জুলাই জাতীয় মূসক সপ্তাহ পালন করবে। এবারের সস্নোগান ‘মূসক দিব জনে জনে অংশ নিব উন্নয়নে’।
রাজস্ব সৈনিক হিসেবে সবার ভাবা উচিত যে, জাতির উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। থাকতে হবে দেশপ্রেম ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও প্রযুক্তির যুগের মধ্যে তাল মিলিয়ে চলতে হলে করদাতাদের সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে সুসম্পর্ক এবং আলোচনার মাধ্যমে সব সমাধান বের করতে হবে। বলা বাহুল্য, শুল্ক বিভাগে ১৯৮০-৮১ সালের পরে নতুন কোনো লোক রিক্রুট ছিল না। দীর্ঘদিন অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর ইতোমধ্যে সরকার ২০১৪ সালে ৬৫৭ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রিক্রুট করেছে। এটা অবশ্যই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ভালো দিক। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে। কারণ শিক্ষা যেমন জাতির ভবিষ্যৎ, তেমনি দেশের মেরুদ- সোজা হওয়ার ভিত্তি অর্থনীতি। বলতে দ্বিধা নেই, দেশে এনজিও ভবন, রেলওয়ে ভবন, মৎস্য ভবন, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট, ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডাকঘর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ভালো কথা। অথচ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শতকরা ৮০% রাজস্ব আদায় করে। সেই বিভাগের কোনো নিজস্ব ভবন নেই। এটা কি ভাবা যায়? দীর্ঘদিন আগে আগারগাঁওয়ে জায়গা কেনা হলেও সেখানে ভবন নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়নি। তবে আশার আলো যে, বিলম্বিত হলেও এবার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আগারগাঁওয়ে তিন একর জমিতে ১৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজস্ব ভবন নির্মিত হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন। বর্তমান বিশ্বে মানুষ, পৃথিবী, সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়, সমাজও বাইরে নয়, একমাত্র মানুষই পারে সভ্যতা গড়তে। আর মানুষই পারে এ সভ্যতা ধ্বংস করতে; যা পৃথিবীর দিকে তাকালেই দেখতে পাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকা বাজেট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ টাকা রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ধার্য করা হয়েছে, যার শতকরা হার ৫৯.৮%। এর মধ্যে মূসক বাবদ ৫৬ হাজার কোটি, আয়কর বাবদ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি এবং শুল্ক বাবদ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণ একটি দুরূহ কাজ। সে কাজটি রুট লেভেলের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তারা পালন করেন। তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হয়। সরকারি রাজস্ব আহরণ করতে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদের নেই কোনো বাসস্থান, গাড়ি, কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট। এগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যথাযথভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে গুরুত্বসহকারে দেখবে বলে আশা করি।
বাংলাদেশে রাজস্ব ফাঁকি, চোরাচালান ইত্যাদি প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসব কাজে যারা জড়িত থাকে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। চোরাচালান রোধ ও রাজস্ব ফাঁকির তৎপরতার জন্য আমাদের অনেক সহকর্মী আত্মাহুতি দিয়েছেন। এতে দেশ, জাতি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতোমধ্যে যাদের হারিয়েছি তাদের কথা না বললেই নয়। তারা হলেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট আবদুর রউফ, হামিদুল হক চৌধুরী, চিত্তরঞ্জন রায়, স্বপন দাস প্রমুখ রাজস্ব সৈনিক। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। একুশ শতকে বিশ্বের সঙ্গে তাল দিয়ে চলতে হলে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আরো কঠোর পরিশ্রমী, উদ্যোগী হতে হবে। পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গি চড়ংরঃরাব হতেই হবে। উদাহরণ দিয়ে বলতে হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান বিশ্বে দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর রাজস্ব আহরণের প্রথম কাতারে ছিল। বর্তমানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়কর, মূসক ও কাস্টমসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আরো নতুন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান করতে হবে। ভালো কাজের অবশ্যই মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। যেমন পুরস্কৃত করা উচিত। পাশাপাশি মন্দ কাজের জন্যও তিরস্কার হওয়া উচিত। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করে জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের শিল্প কারখানা বাড়াতে হবে। হাজার হাজার শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে তা সচল করার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। ব্যাংকগুলোকেও উদ্যোগী হতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করতে হবে। তাহলে বেকার সংখ্যা লাঘব হবে, রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি সাধন হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা না করলেই নয় তা হলো কাস্টমস এবং ভ্যাটের হাজার হাজার মামলা আদালতে নিষ্পত্তির অভাবে সরকারের পাওনা টাকা পড়ে আছে। এগুলোর ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। আলাদা উইং করে অতিরিক্ত জনবল বাড়িয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজস্বের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস উদ্যোগী এবং আন্তরিক হলে সরকার প্রচুর রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।
যেহেতু পূর্ব কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পদস্থ আছি সেহেতু পূর্ব কমিশনারেট নিয়ে দু-একটি কথা না বললেই নয়। পূর্ব কমিশনারেটের জন্ম খুব বেশি দিন হয়নি ২৮.১১.২০১১ সাল। সদর দপ্তর পূর্বতে ৮টি বিভাগ ও ৩২টি সার্কেল নিয়ে গঠিত। যার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫৬ জন। তবে পদস্থ রয়েছেন ২৭৬ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ঢাকার শ্যামপুর, সূত্রাপুর, ডেমরা, বন্দর, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জ ও নরসিংদী বিভাগ নিয়ে পূর্ব কমিশনারেটের সৃষ্টি। নবগঠিত কমিশনারেটের সময় ২০১১-১২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬৫ কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল ৪৮০ কোটি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল ৫৮৬ কোটি। প্রবৃদ্ধির হার ২২%। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১১ কোটি টাকা, বিপরীতে মে/১৪ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৬১২ কোটি টাকা। জুন/১৪ পর্যন্ত সাময়িক রাজস্ব দাঁড়ায় ৬৮৫ কোটি টাকা। আশা করি জুন/১৪-তে এবারো পূর্ব কমিশনারেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। কেননা বর্তমান পূর্ব কমিশনারেট যিনি কমিশনার হিসেবে পদস্থ আছেন তিনি সৎ ও দক্ষ অফিসার হিসেবে পরিচিত। তেমনি ধার্মিকও বটে। শুধু তাই নয়, রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে বিন্দুমাত্র তার কাছে ছাড় নেই। পূর্ব কমিশনারেটের রাজস্ব মিটিংয়ে এবং আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারি অনেক প্রতিষ্ঠান তার নখদর্পণে রয়েছে। সদর দপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম-কমিশনার, সহকারী কমিশনার, রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, বিভাগীয় কর্মকর্তা ও সার্কেলের রাজস্ব ও সহকারী কর্মকর্তাসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে পূর্ব কমিশনারেট রাজস্ব আদায়ে হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শক্ত এবং ভালো অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। কমিশনারের প্রশাসনিক দক্ষতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে কমিশনারেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে পূর্ব কমিশনার ফৌজিয়া বেগম কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈঁংঃড়সং উধু-২০১৪ উপলক্ষে ডঈঙ-এর পক্ষ থেকে ঈবৎঃরভরপধঃব ড়ভ গবৎরঃ প্রাপ্তির গৌরব অর্জন করেছেন। এতে কমিশনারেটকে অনুপ্রাণিত করবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষ থেকে তার দক্ষতা অর্জনে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এ ব্যাপারে সদর দপ্তর, বিভাগীয় অফিস ও সার্কেল অফিস অতীতে যেভাবে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এ দুরূহ কাজটি এবারো লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে আরো সচেতন হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
পরিশেষে বলতে চাই_ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল স্বল্প আয়ের দেশ। রাজস্ব আদায়ের মতো কঠিন এবং দুরূহ কাজটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অধিদপ্তরের অনুবিভাগগুলো দ্বারা সম্পন্ন করতে হয়। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে নতুন মূসক আইন সংসদে পাস হয়েছে এবং ২০১৫ সাল থেকে কার্যকর হবে। ভ্যাটসংক্রান্ত বিষয়ে নানান জটিলতা থাকতেই পারে তবে কার্যক্ষেত্রে আশা করি সে পথ দূর হয়ে যাবে। এ ছাড়াও কমিশনারেটগুলোয় বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তা অস্বীকার করে লাভ নেই। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার দরুন ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। সেই সমাধান নিজেদেরই করতে হবে। দেশ, জাতির কথা চিন্তা করে এবং কীভাবে আরো রাজস্ব বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে নজর দেয়া জরুরি তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ৭০%। বর্তমানে তা ৪০% নেমেছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৯০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ শিক্ষা, প্রযুক্তি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য এবং প্রবৃদ্ধিতেও এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে ১৬ কোটি লোকের বাস। কিন্তু পাশাপাশি বেকারের সংখ্যাও কম নয় প্রায় ২ কোটি। ঋণের বোঝাও কম নয়। তবে এটা ঠিক, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে নানা অসুবিধার মধ্যেও। বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আর কত ঋণের বোঝা বিশ্বব্যাংক, আইএফএম, এডিবি, ডবিস্নউটিএর মুখাপেক্ষী হতে হবে জানি না? দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিদেশি বন্ধুদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে দেশের বেকারত্ব হ্রাস পাবে। আশা করি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে এবং দক্ষতার পরিচয় দিলে আগামীতে রাজস্ব আদায় যেমন সম্ভব হবে এবং তেমনি দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
বর্তমান সরকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে। তবে সবার আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ করা জরুরি। দেশ ও জাতির স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই দেশের রাজস্ব যেমন বাড়বে তেমনিভাবে মূসক দিবসের সফলতা আসবে এবং শুল্ক বিভাগের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে, মর্যাদা বাড়বে।
মোহাম্মদ শামসুল কবির : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
Leave A Comment